SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যা-প্রতিকার ও প্রতিরোধ | NCTB BOOK

দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে আমাদের মন খারাপ হয়। কখনো অন্য কারও কটু কথা বা অপ্রীতিকর আচরণে আমরা মনে কষ্ট পাই। নিজের ইচ্ছা বা চাহিদা পূরণ না হলে আমাদের মন খারাপ হয়। আবার কোনো দুঃসংবাদ বা ঘটনা আমাদের মন কষ্টের কারণ হয়। এই মনের কষ্ট থেকেই সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ। মানসিক চাপ এক ধরনের বেদনাদায়ক অস্বস্থিকর আবেগীয় অবস্থা, যা আমাদের মনে দ্বন্দ্ব হতাশার সৃষ্টি করে। ফলে আমরা অস্থির উত্তেজিত হই এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় আমরা মানসিক চাপ অনুভব করি। এই চাপ কখনো তীব্র আবার কখনো মৃদু হয়। মানসিক চাপ ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে।

ইতিবাচক চাপ দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। একে যদি আয়ত্তাধীন রাখা যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে এই চাপ অনেক সময় আমাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে সাফল্য বয়ে আনে। যেমনপরীক্ষার সময় যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তা পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করে।

আবার চাকরির ইন্টারভিউ বা নতুন চাকরি, বিভিন্ন কাজ বা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব আমাদের ইতিবাচক মানসিকচাপ সৃষ্টি করে

নেতিবাচক চাপ মানুষের মনের মধ্যে এমন কিছু চাপ মাঝে মধ্যে দেখা দেয় যা স্নায়ুবিক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এটাই নেতিবাচক চাপ। এই চাপ আমরা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বা ছন্দপতন ঘটায়

নেতিবাচক চাপ আমাদের নানা শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন

 

  • বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, জিহ্বা শুকিয়ে আসা, অস্থিরভাব, উত্তেজনা বোধ,আচরণে বিশৃংখলা প্রভৃতি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদি তীব্র মানসিক চাপ শরীরে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যেমনহৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্ষুধামন্দা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি করে।

 

মানসিক চাপ আমাদের জীবনে প্রায়ই দেখা যায়। নিচের দুইটি ঘটনা থেকে তা সহজেই বোঝা যায়।

 

শিক্ষক লক্ষ করলেন ক্লাসে মিনা মন খারাপ করে বসে আছে। শিক্ষক কারণ জানতে চাইলে মিনা কেঁদে ফেলে। সে জানায় তার ছোট ভাই খুব অসুস্থ। ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু জ্বর ভালো হচ্ছে না। সে তার ভাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে। ফলে সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।

 

রফিক নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা নেই। সংসারে অনেক অভাব। তাই সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বইয়ের দোকানে কাজ করে। তার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছা। আর্থিক অনটনের কারণে সে সব সময় চিন্তা করে কীভাবে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে।

 

মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা সবার এক রকম নয়। আবার চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়াও সবার এক রকম নয়। চাপের সময় অনেকে ধীরস্থির শান্ত থাকে। অনেকে চাপের মুখে অস্থির উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মানসিক চাপের সাথে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, বয়স, মানসিক গঠন, সম্মানবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

 

মানসিক চাপের কারণনানা কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

  • কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা বা দুঃসংবাদ।
  • পারিবারিক বিশৃংখলা, দরিদ্রতা, বঞ্চনা, দুঃখ-বেদনা, নিরাপত্তার অভাব।
  • সামাজিক উৎপীড়ন, সামাজিক বৈষম্য, নৈতিকতার অবক্ষয়
  • নিজের ইচ্ছা বা বাসনা পূরণ না হওয়া।
  • ক্রমাগত কাজের চাপ
  • পরীক্ষার সময় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকা।
  • সব সময় আতঙ্কগ্রস্থ থাকা।

 

মানসিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষার উপায় -

  • যে কোনো বেদনাদায়ক অবস্থায় বা দুর্ঘটনায় মনোবল বজায় রাখতে হবে।
  • ধৈর্যধারণ করতে হবে। ধৈর্যধারণ করা মানুষের একটি বড় গুণ।
  • পারিবারিক কোনো বিষয় মানসিক চাপের কারণ হলে,পরিবারের সবাই আলোচনা করে তা মোকাবিলা করতে হবে।
  • কারও কোনো বৈষম্যমূলক আচরণে মন খারাপ হলে, তার সাথে কথা বলে নিজের মনের অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।
  • পরীক্ষায় খারাপ করে যাতে হতাশায় পড়তে না হয় সেজন্য সময়মতো ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে।
  • সময় পরিকল্পনা বা কর্মপরিকল্পনা করে চললে সময়মতো সব কাজ শেষ হবে ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে না এবং জীবনে সাফল্য আসবে।
  • মনে যদি কোনো আতঙ্ক, ভয় বা দুর্ভাবনার সৃষ্টি হয় তা থেকে মুক্তির জন্য বিষয়টি নিয়ে বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষকের সাথে আলাপ করতে হবে।
  • বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। ভালো সৎ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। কেউ বিরক্ত করলে বা অযৌক্তিক কোনো কথা বললে দৃঢ়তার সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে।

 

 

কাজ : কোনো বিষয় বা ঘটনা যদি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তখন তুমি কী করবে।

 

 

Content added By

Promotion